The Technic of Dose and Potency Selection of Homeopathic Medicine ( হোমিও ঔষধের শক্তি মাত্রা নির্বাচন কৌশল)
Homeopathic Medicine |
পৃথিবীতে যারা ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ চর্চা করেন, তাঁরা অনেক কষ্ট করে রোগীকে আরোগ্য করে থাকেন। রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণগুলি নিয়ে অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয় এবং রোগ ও রোগীর অনেক গভীরে প্রবেশ করে থাকেন একজন ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ। মূলকথা হলো ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিতে ঔষধ নির্বাচন অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কষ্ট সাধ্য যদিও বর্তমানে কম্পিউটারাইজ রেপার্টরী ও ম্যাটেরিয়া মেডিকা ব্যবহার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে; তথাপি অন্য যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ অনেক কষ্ট করে ঔষধ নির্বাচন করে থাকেন। আবার ঔষধ নির্বাচন সঠিক হলেও তার শক্তি ও মাত্রা নির্ধারণ করা দ্বিতীয় কঠিন কাজ।
শক্তির বিষয়ে আলোচনার পূর্বে আমরা কিছুটা জানি যে হোমিওপ্যাথি ঔষধে কি কি ধরণের শক্তি হয়ে থাকে।
হোমেওপ্যাথিক ঔষধ গুলি ৩ টি স্কেলে পরিমাপ করা হয়।
১) ডেসিমেল স্কেল
২) সেন্টিডেসিমেল স্কেল
৩) কেপ্টি ডেসিমেল স্কেল
শক্তিকৃত ঔষধগুলিকে ৩ ভাবে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
১) নিম্নশক্তি- মাদার টিংচার থেকে ১২ পর্যন্ত।
২) মধ্যম শক্তি- ১২ থেকে ২০০ শক্তি পর্যন্ত।
৩) উচ্চ শক্তি ২০০ থেকে যত উচ্চ শক্তি করা যায়।
হোমিওপ্যাথ ডাক্তরগণ কেউ নিম্নশক্তি, কেউ মধ্যম শক্তি আবার কেউ উচ্চ শক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা করে থাকেন। উল্লেখিত ৩ ধরণের মধ্যমেই রোগী আরোগ্য হয়ে থাকে। এটা কোন সুনির্ধারিত বিষয় নয় যে আপনাকে নিম্নশক্তি, মাধ্যম শক্তি অথবা উচ্চ শক্তির ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে বিষয়টি মূলতঃ ডাক্তারদের উপরই নির্ভর করে থাকে যে তিনি কোন ধরণের শক্তি ব্যবহার করবেন। আর এটা বলাও ঠিক হবেনা যে তিনি এই ধরণের শক্তি ব্যবহার করছেন বলে তার সাফল্য আসছেনা বা রোগী আরোগ্য হচ্ছে না। আসলে সব ধরণের শক্তিতেই ফলাফল পাওয়া যায়।
কিছু কিছু দেশে ডাক্তারগণ নিম্নশক্তি ছাড়া উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন না কেননা সে দেশের ঔষধ নীতিতে এমন বিষয় উল্লেখ আছে যে, “যে উপাদানের মাধ্যমে ঔষধ তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ ঔষধের মূল উপদান ঔষধে অবশ্যই থাকতে হবে।” আমরা জানি ১২ শক্তি পর্যন্ত হোমিও ঔষধে উক্ত ঔষধের মূল উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরচেয়ে উচ্চ শক্তিকৃত করা হলে সেখানে শুধু মাত্র শক্তি বর্তমান থাকে। যখন পটেনটাইজেশন করা হয় তখন মলিকিউলস গুলি দূরে সরে যায় এবং এনার্জি বেরিয়ে আসে উক্ত এনার্জি ্এলকোহলে মিশে যায় বা জমা হয়ে যায় ফলে ১২ শক্তির উচ্চে উপাদানের আর অস্তিত্ব থাকে না। বিধায় সে দেশে নিম্নশক্তি ভিন্ন উচ্চ শক্তির ঔষধ পাওয়া যায় না। ফলে ডাক্তারগণ নিম্ন শক্তি দিয়েই চিকিৎসা করে থাকেন।
আমাদের দেশে নিম্ন মাধ্যম ও উচ্চ শক্তি সবেই ব্যবহার হয়। শুধু তাই নয় সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথির প্রচার ও প্রসার ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ হোমিওপ্যাথিতে ফল পাচ্ছে। হোমিওপ্যাথির পাওনিয়ারগণ যাদের হাত ধরে আজ পৃথিবীতে হোমিও ব্যপক প্রচার পেয়েছে যেমন ডাঃ কেন্ট, ডাঃ ক্লার্ক, ডাঃ হেরিং, ডাঃ ন্যাস, ডাঃএলেন, ডাঃ বোনিং হোসেন আরও অনেকে যাদের নাম লিখলে তালিকাটা অনেক বড় হবে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিম্নশক্তি ব্যবহার করতেন আবার অনেকে উচ্চ শক্তি ব্যবহার করতেন । উদহারন স্বরূপ বলা যায় ডাঃ কেন্ট উচ্চ শক্তি বেশি ব্যবহার করতেন এবং ডাঃ বোরিক নিম্নশক্তি বেশি ব্যবহার করতেন। মূলকথা হলো আমরা নিজেস্ব বিবেচনায় রোগীর অবস্থা ঔষধের প্রাপ্তি গুণাগুণ মাথায় রেখে সুনির্বাচিত ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে সাফল্য পেতে পারি।
নিম্নে ঔষধের শক্তি প্রয়োগের কয়েকটি কৌশল উল্লেখ করা হলো যা অনেক বিজ্ঞ ডাক্তারগণ করে থাকেন-
= যখন ঔষধ লক্ষণ ও রোগীর লক্ষণ বহুল অংশে মিলে যায় বিশেষ করে মানসিক লক্ষণ তখন আপনি উচ্চ শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
= যখন ঔষধের মানসিক লক্ষণ ও রোগীর মানসিক লক্ষণ খুবই কম মিলে তখন আপনি নিম্নশক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
= রোগী যদি শারীরিক পরিশ্রম খুবই কম করেন অর্থাৎ অফিসে বসে বসে কাজ করে, মানসিক চাপ বেশি থাকে শারীরিক কোন ধরণের পরিশ্রম হয় না এমন রোগীকে উচ্চ শক্তি দেওয়া যেতে পারে।
= রোগী যদি মানসিক পরিশ্রম কম ও শারীরিক পরিশ্রম বেশী করেন তাহলে নিম্নশক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
= রোগীর রেজিষ্টান্ট পাওয়া, জীবনী শক্তি ভাল থাকলে যেমনটা কিশোর ও যুবকদের দেখতে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে উচ্চ শক্তি দেওয়া যেতে পারে।
= রোগীর বয়স বেশী, রেজিষ্টান্ট পাওয়া কম, জীবনী শক্তি দূর্বল এমন হলে নিম্নশক্তি দ্বারা চিকিৎসা করা ভাল।
One drop of homeopathy can cure you |
= যদি ঔষধ নোসড হয় তাহলে নিম্ন শক্তি না দিয়ে মাধ্যম বা উচ্চ শক্তি ব্যবহার করে রোগীর চিকিৎসা করা ভাল।
= রোগীর শারীরিক লক্ষণ বেশী এবং মানসিক লক্ষণ কম এমন অবস্থায় রোগীকে নিম্নশক্তি দেয়া উত্তম।
= যখন প্যাথলোজিক্যাল সিম্পটম বেশী কিন্তু মানসিক লক্ষণ কম এমন ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি ব্যবহার করা ভাল। উদহার স্বরূপ বলা যেতে পারে আলসার, ক্ষত।
=রোগী দেখার সময় যদি এমন মনে হয় যে রোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে উদহারন স্বরূপ টিউবারকিউলোসিস, এইচআইভি, ক্যান্স্যার এর শেষ অবস্থা হলে নিম্নশক্তি ব্যবহার করাই ভাল।
= কিছু কিছু রোগী তীব্র ড্রাগ সেনসিটিভ হয়ে থাকে। সামান্য ঔষধ প্রয়োগেই ক্রিয়া প্রকাশ পায় এমন রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি ব্যবহার করা ভাল।
= এমন কিছু ঔষধ আছে যেমন, হিপার সালফ, সাইলিসিয়া মেটেরিয়া মেডিকাতে কোন কোন ডাক্তারগণ উল্লেখ করেছেন নিম্নশক্তিতে যে ধরণের ক্রিয়া প্রকাশ করে উচ্চ শক্তিতে তার বিপরীত ক্রিয় করে থাকে। উদহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সাইলিসিয়া নিম্নশক্তি পুঁজ উৎপাদন করে কিন্ত উচ্চ শক্তিতে তা শুকিয়ে দেয়।
= কিছু ঔষধ নোষড নয় তবু তীব্র ক্রিয়া প্রকাশ করে যেমন ফসফরাস, সাইলিসিয়া (মেটেরিয়া মেডিকা অনুযায়ী) তীব্র ও দীর্ঘ ক্রিয়া প্রকাশক। এ ধরণের ঔষধগুলি ব্রঙ্কাইটিস, টিউবারকিউলোসি এর মত তীব্র পীড়াদায়ক রোগে ব্যবহার করলে রোগীর শরীরে তীব্র ক্রিয়া প্রকাশ পায়; রোগীর রোগ কষ্ট বেড়ে যায়। তাই শুধু রেপার্টরি নির্ভর না করে মেটেরিয়া মেডিকা অনুসরণ করে ঔষধের মেরিট অনুযায় ব্যবস্থাপত্র করা উচিত।
[আমার ঝুড়িতে এটুকুই ছিল, এবার আপনাদের পালা, আপনাদের মতামত এবং ঔষধ প্রয়োগের আরও কোন ভাল কৌশল জানা থাকলে জানাতে ভূলবেন না। সকলের মতামত আশা করছি ]
কোন মন্তব্য নেই