Header Ads

Pharyngitis and its homeopathic treatment- ফ্যারিনজাইটিস বা গলনলীর প্রদাহ

Pharyngitis and its homeopathic treatment- ফ্যারিনজাইটিস বা গলনলীর প্রদাহ 


ফ্যারিংস থাকে নাক, মুখ ও স্বরযন্ত্রের ঠিক পেছনে। নাসিকা হইতে আমাদের গৃহীত শ্বাস নাসারন্ধ্র দিয়ে ফ্যারিংস, ল্যারিংস, ট্রেকিয়া হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। গলগহ্বরের শেষ প্রান্তে পাঁচটি পথ উম্মুক্ত আছে। 

১) কর্ণরন্ধ্র পথ 
২) নাসারন্ধ্র পথ 
৩) স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস 
৪) গলকক্ষ বা ফ্যারিংস
৫) পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তু প্রবেশের পথ। 

ফ্যারিংস এর দুই পাশে দুইট গ্রন্থি টনসিল অবস্থিত। জিহ্বার গোড়ার দিকেই গলাভ্যন্তরে পাশাপাশি দুইটি নালী আছে একটি মধ্য দিয়ে আমাদের আহার্য দ্রব্য পাকস্থলিতে প্রবেশ করে এবংঅন্যটির মধ্যদিয়ে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য বায়ু যাতায়াত করে। আমাদের আহার্য দ্রব্য অথবা পানীয় গলনলীতে প্রবেশ করার সময় প্রথমেই ফানেল আকার যে গর্তের মধ্যে পতিত হয় উহাই ফ্যারিংস। এই ফ্যারিংসের প্রদাহকেই ফ্যারিনজাইটিস বলা হয়। 

রোগের অবস্থা অনুযায়ী ফ্যারিনজাইটিস দুই ভাগে বিভক্ত-
ক) একিউট বা তরুণ ফ্যারিনজাইটিস 
খ) ক্রনিক বা পুরাতন ফ্যারিনজাইটিস। 

পুরাতন ফ্যারিনজাইটিসকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়- 


১) ফলিকিউলার 
২) ক্রনিক সোর-থ্রোট। 

বিভিন্ন কারণে ফ্যারিনজাইটিস হয়ে থাকে তবে সাধারণতঃ গলায় ঠান্ডা লাগা, গলার মধ্য দিয়ে কোন উত্তেজক গ্যাস প্রবেশ করা, গরমের সময় প্রবল উত্তাপ জনিত ঘর্ম নিঃসরণ কালে ঠান্ডা পানি পান, ঠান্ডা পানিতে গোসল করা, বৃষ্টির পানিতে দীর্ঘক্ষণ থাকা, ভেঁজা কাপড়ে দীর্ঘ সময় থাকা। এছাড়া কিছু রোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষা, আরক্ত জ্বর,  ষ্ফোটক জ্বর, অতিরিক্ত মদ পান ও ধমপান এই রোগের উত্তেজক কারণ বলে ধরা হয়ে থাকে। সব বয়সেই এই রোগ হতে পারে। রোগের শুরুতে চিকিৎসা না করা হলে অনেক সময় সার্জারীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রোগীকে সব সময় ঠান্ডা যেন না লাগে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিড়ি, সিগারেট, পান, জর্দা, অস্বাস্থ্যকর আদ্র আবহাওয়া পরিহার করতে হবে। মুখ ও গলগহ্বর সব সময় পরিস্কার রাখতে চেষ্টা করতে হবে। খাদ্য গ্রহণ শেষে হালকা গরম পানিতে সামান্য খাবার লবন দিয়ে কুলি করে মুখ ও গলা পরিষ্কার রাখলে রোগী অনেকট ভাল থাকে। 

হোমিওপ্যাথিতে কোন রোগের জন্য সুনির্দিষ্ট ঔষধ নির্বাচন করা দুরহ তবে যে সকল ঔষধ গলা শ্বাস নালীর উপর ক্রিয়া প্রকাশ করে সে সকল ঔষধ রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় এবং সার্জারীর প্রয়োজন পড়ে না। 

এমন মিউর (৬, ৩০, ২০০)গলার ভিতরে ও বাহিরে ফুলে যাওয়া বেদনা, টনসিলে স্ফীতি ও দপদপ করা, রোগী খাদ্য দ্রব্য গিলতে পারে না। চটচটে শ্লেষ্মা নির্গত হয়। এই চটচটে শ্লেষ্মা রোগী অনেক চেষ্টা করেও গলা থেকে বাহির করতে পারে না। স্বরযন্ত্রে জ্বালা ও গলাধরা। 

বেলেডোনা ( ৬, ৩০, ২০০)। তরুণ প্রদাহে গলনালী অতিশয় শুষ্ক ও টকটকে লাল বর্ণ  হয়ে থাকে। ঢোক গিলতে বেদনা, কণ্ঠ নালীতে চাপিয়া ধরার ন্যায় বেদনা। এই বেদনা গলায় খসখসে ভাব, চিলিক মারার ন্যায় অনুভূতি ও সামান্য শ্লেষ্মা সঞ্চয় দিয়ে শুরু হয়। অনেকক্ষণ গলা খাঁকরি দেওয়ার পর ঐ শ্লেষ্মা সামান্য দুর পর্যন্ত উঠে। ঘন ঘন ঢোক গিলার ইচ্ছা কিন্তু বেদনানুভব। মুখের ভিতরে এবং গলনলীর মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত হয়, তাহা হইতে কখনও কখনও রক্ত পড়ে। উক্ত অবস্থার সাথে জ্বর ও মাথা ব্যথা দেখা দেয়।

এলিউমিনা (৬, ৩০, ২০০)। গলনালী অত্যন্ত লাল ও শুষ্ক এবং সেই সঙ্গে স্বরভঙ্গ, সকালে স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি। রোগীর আলজিব বাড়ে, গলনালীতে ক্ষত হয়। গিলিবার সময় মনে হয় যেন গলার মধ্যে ফুলিয়া কি একটা আটকাইয়া রয়েছে। ফলিকলস প্রদাহযুক্ত। গলার ভিতর সর্দি জড়াইয়া থাকে, রোগী উহা বার বার চেষ্টা করে তুলে ফেলার জন্য। অনেকক্ষণ কাশির পর গলা হইতে শক্ত সর্দি ওঠে। স্বর ক্ষীণ এবং ঠান্ডা লাগিলেই এক অদ্ভত সুড়সুড়ি অনুভুত হয়। গলার বেদনা ও যন্ত্রণা গরম পানাহারে উপশমিত হয়।

এরাম ট্রাইফাইলাম (৬, ৩০, ২০০)। গায়ক, বক্তা, উকিল ও মোক্তার যারা স্বরযন্ত্রে অধিক চাপ প্রয়োগ করেন তাদের স্বরভঙ্গে অধিক উপকারী। বক্তা উচ্চ স্বরে কথা বলিতে গেলে গলা ভাঙ্গিয়া বা বসিয়া যায়। ইহাতে স্বর কখনও উচ্চ কখনও নীচু ভাবে বাহির হয়। গলনালী ফোলা, কাঁটাবেধা বা হুলফোটানর মত বেদনা বা জ্বালা। মুখের মধ্যে ক্ষত হয়। কোন আহার্য গলাধঃকরণে খুব কষ্ট ও বেদনা। কাশি ছাড়াই গলা হইতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতকর লালা নিঃসরণ হয়।

আর্জেন্ট নাইট ( ৬, ৩০, ২০০)। গলাতে অতিশয় চটচটে শ্লেষ্মা জমিয়া থাকে। উহা টানিলে তারের ন্যায় শ্লেষ্মা বাড়ে সেজন্য রোগী গলা পরিষ্কার করিতে চায়। তাহাতে কাশি আসে, স্বরভঙ্গও হয়। গলার মধ্যে ছোট ছোট আঁচিলের ন্যায় মাসাঙ্কুর ও অনেক সময় জন্মে। গিলিবার সময় মনে হয় যেন গলায় একটি কাঠি রহিয়াছে বা মাছের কাঁটা থাকার অনুভুতি। ব্যথা ও টাটানিভাব। ইহার রোগীর ঠান্ডা জিনিষে পছন্দ বেশী। উক্ত লক্ষণে দীর্ঘকাল স্থায়ী গলায় রক্ত সঞ্চয়। ফলিকিউলার ফ্যারিনজািইটিসে পুরাতন গলক্ষতে ইহা বিশেষ উপকারী। গায়ক, উকিল ও অধ্যাপকের উক্ত গলনালীর লক্ষণে ও গলক্ষতেও ইহা ব্যবহার্য।

আর্জেন্ট মেট ( ৬, ৩০, ২০০)। ফ্যারিংস, ল্যারিংস কিম্বা ব্রঙ্কাইয়ের কোন পুরাতন পীড়ায় জেলির ন্যায় শ্লেষ্মা জড়াইয়া থাকে। রোগী উহা পুনঃ পুনঃ কাশিয়া তুলিয়া ফেলার চেষ্টা করে। জোরে হাসিলে, কথা বলিলে বা পাঠ করিলেই কাশি হয়। বক্তৃতা দেওয়ার সময় গান করার সময় এই ঔষধের লক্ষণ যুক্ত স্বরভঙ্গ দেখা দেয়। এই অবস্থায় অনেকের গলাটি ধরিয়া যায়, গলার মধ্যে বেদনা করে, জ্বালা ও কাশি হয়, সামান্য কাশি হওয়া মাত্রিই তালের শাঁসের ন্যায় শ্লেষ্মা নির্গত হয়।

এপিস (৩, ৫, ৩০) ঃ তরুণ ফ্যারিনজাইটিস, গলা ফুলিয়া যায়, হৃল ফোটানোর ন্যায় ব্যথা, টনসিল ও আলজিব ফোলে ও বড় হয়। গলা ও জিভ ফোলে বলিয়া নিঃশ্বাস ফেলিতে কষ্ট হয়, গলনলী অতিশয় লাল হয়। রোগীর গলার ভিতর নরম অংশে থলীর মত ফোলে। এপিসে পিপাসা থাকে না, ডান দিকে পীড়ার আরম্ভ। গলনালীর সংঙ্কোচন ভাব।

আর্সেনিক আয়োড ( ৩, ৬, ৩০, ২০০)। টিউবারকুলার দোষযুক্ত রোগীতে ইহা উপকারী। অনেকদিনের পূরাতন ফলিকিউলার গলক্ষত। রোগীর গলা ফোলে, গলায় অতিশয় টাটানি বেদনা ও জ্বালা। নিঃশ্বাসে অতিশয় দুর্গন্ধ ও সেই সঙ্গে জ্বর।

হিপার সালফার ( ৬, ৩০, ২০০)। ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস রোগে, ফ্যারিংসে ছোট ছোট দানাযুক্ত ফুষ্কুড়ি তাহাতে রসপড়া, ফোলা, গলায় শ্লেষ্মা জমে কিন্তু সহজে উঠে না এই সমস্ত লক্ষণে হিপার উপকারী। হিপারে টনসিল খুব ফোলে এবং রোগীর গলায় কাঁটা বেঁধার মত বেদনা অনুভব করে। ঐ বেদনা কান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পুরাতন প্রদাহে মার্কুরিয়াসে উপকার না হইলে হিপার প্রযোজ্য।

কেলি বাইক্রম ( ৬, ৩০, ২০০)। ফ্যারিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ কাশি এবং গলাধরা ও চুপি চুপি কথা বলা। গলার ভিতরে ঘা। গলার ভিতর ফুলিয়া লালবর্ণ হয়, ফ্যারিংসে চকচকে ও তামার রঙ এর মত রং দেখায়। ক্ষত মুখ দিয়া লালা নির্গমন। গলায় বেদনা, বহুক্ষণ কাশিলে কফ ওঠে আঠার ন্যায় ও তারের ন্যায় সুতার মত লম্বা হইয়া গয়ার উঠে অথবা কাশিতে কাশিতে হঠাৎ ছোট একডেলা সর্দি উঠিয়া আসে।

ফাইটোলাক্কা ( ৩, ৬, ৩০, ২০০)। গলক্ষত, গলা প্রদাহিত লাল ও শুষ্ক। টনসিল স্ফীতি লালবর্ণ । গিলিবার সময় উভয় কানের ভিতর পর্যন্ত অত্যন্ত বেদনা ও কনকনানি ইহাতে নির্দিষ্ট, নীলবর্ণ ফ্যারিংস। গলদেশেই ইহার রোগ লক্ষণ পরিব্যপ্ত থাকে। গলার ভিতর যেন একটি উত্তপ্ত অগ্নি গোলক আছে এই প্রকার অনুভূতি এবং তজ্জনিত দারুন জ্বালা। গরম পানীয় গলাধঃকরণে অক্ষমতা ও তাহাতে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি এবং ঠান্ডা পানে উপশম। মুখ দিয়া দুর্গন্ধযুক্ত লালাস্রাব নির্গত হয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.