পেপটিক আলসার বা পরিপাক যন্ত্রাদির ক্ষতসমূহ ( Peptic, Gastric, Duodenal Ulcers and its Homeopathic Treatment)
পাকস্থলীর ও গ্রহণীর ক্ষত
Peptic Ulcer |
পাকস্থলীর পাইলরিক গ্রন্থি সমূহের সেন্টাল সেল সমূহ অতি ক্ষুদ্র দানা সমন্বিত। রসক্ষরণকালে েঐ দানা বাহির হইয়া সেল সকল পরিস্কার দেখায়। ইহাদের ভিতর হইতেই পেপসিন নির্গত হয়। আবার প্যারাইটাল সেল হইতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড প্রস্তুত হয়। এই পেপসিন এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষতিকর প্রভাবে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইন্যাল ট্রাক্ট এর সারফেস এপিথেলিয়াম ক্রমশঃ বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় ইহারই নাম পেপটিক আলসার বা পরিপাক যন্ত্রাদির ক্ষত।
পরিপাক যন্ত্রাদির ক্ষত পাকস্থলী এবং গ্রহণীর মধ্যে ইহায়া থাকে। সাধারণতঃ পেপটিক আলসার বা পরিপাক যন্ত্রাদির ক্ষত দুই প্রকার হইয়া থাকে।
ক) পাকস্থলীর ক্ষত বা গ্যাষ্টিক আলসার।
খ) গ্রহণীর ক্ষত বা ডিওডেনাল আলসার।
উদর ও বক্ষব্যবধায়ক পেশী ডয়েফ্রামের নীচে পাকস্থলী অবস্থিত। প্রথমে খাদ্য কার্ডিয়ার মধ্য দিয়া পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। পরে পাকস্থলী হইতে পাইলোরিক এন্ড এর মধ্যে দিয়ে ডিওডেনাম বা অন্ত্রের প্রথমাংশে প্রবেশ করে। পাকস্থলীর আভ্যন্তরীন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ক্ষত হইলে তাহাকে গ্যাষ্ট্রিক আলসার বলে। পাকস্থলীর ভিতর ও নিম্ন মুখে এই ক্ষত হইয়া থাকে। ক্ষত সমূহ তরুণ অবস্থায় ক্ষুদ্রাকারে থাকে, কিন্তু পুরাতন হইলে ইহা আকারে বড় হয়। যদি ক্ষত আকারে বড় হয় সেক্ষেত্রে মাংসপেশী পর্যন্ত আক্রান্ত হইতে পারে।
গ্যাষ্ট্রিক আলসারের লক্ষণঃ-
এই পীড়া সারা জীবন অপ্রকাশিতই থাকিয়া যাইতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বহু বৎসর যাবত পাকস্থলীর গোলমাল দেখা যায়। যদি হঠাৎ পাকস্থলীর রক্তস্রাব না হয় তাহা হইলে ক্ষত সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া কষ্টকর ব্যাপার। এনডোসকপির মাধ্যমে পাকস্থলীর ক্ষত এবং এর তীব্রতা সম্পকে সুনিশ্চিত হওয়া যায়। এই রোগের লক্ষনীয় উপসর্গগুলি হচ্ছে- ক) অজীর্ণতা খ) পেটের ব্যথা গ) রক্তস্রাব (কালচে মল) ঘ) স্পর্শ অসহিষ্ণুতা ঙ) বমি বা বমি বমি ভাব চ) কোষ্ট কাঠিন্য ছ) পাকস্থলীর মধ্যে জ্বালাকর অনুভুতি প্রভৃতি।
গ্রহণীর ক্ষত বা ডিওডেনাল আলসারঃ-
এই পীড়ায় ডিওডেনামের ক্ষতের প্রবণতা সবচেয়ে অধিক থাকে। ডিওডেনামের উত্থিত অংশে বা প্রথমাংশে ইহার সকল ক্ষত দেখা দেয়। আবার কিছু কিছু ক্ষত পাকস্থলী নিম্নমুখ হইতে প্রসারিত হয়। অনেক সময় পাইলোরিক রিং বা পাকস্থলী নিম্নমুখ চক্র আক্রমণ করে।
ডিওডেনামের ক্ষতে রক্ত কাল বর্ণের হয়। ইহাতে খাদ্য গ্রহণের ২।৩ ঘন্টা পর বেদনার সৃষ্টি হয়। রক্তবমন এই রোগে খুব কমই থাকে তবে মলের সহিত কালরক্ত নির্গত হয়। অবশ্য অনেক সময় পাকস্থলী ও অস্ত্র উভয় স্থান দিয়াই রক্ত স্রাব হয় এবং মল ও বমন উভয় ভাবেই রক্ত নির্গত হয়।
বহুল ব্যবহৃত হোমিও ঔষুধ সমূহঃ-
আর্জেন্ট নাইট ( ৬, ৩০, ২০০)। রোগী শুষ্ক ক্ষীণদেহ, ক্ষয়িত মাংস, চোপসান মুখ, কোটরগত চক্ষু এবং বৃদ্ধের অবয়ব বিশিষ্ট। পেট বায়ুতে ফুলিয়া উঠে। কষ্টের সহিত ঢেকুর উঠে। ঢেকুর ও উদগারসহ প্রচুর অধঃবায়ু নিঃসৃত হইলে উপশম বোধ করে। বমনেচ্ছা ও বমন। কখনও কখনও রক্ত বমন হয়। পাকস্থলীতে অম্ল জমে। খাদ্য হজম হয় না সেজন্য উদরাময় উপস্থিত হয়। পাকস্থলী ও উদর যন্ত্রণায় পূর্ণ। প্রকস্থলীর প্রদাহ ও ক্ষত। উপর পেটের সামান্য স্থানে কাটিয়া ছিঁড়িয়া ফেলার ন্যায় তীব্র বেদনা। বেদনার জন্য সামান্য স্পর্শও রোগীর নিকট অসহ্য। আহারের অব্যবহিত পরেই পেট বেদনা এবং যতক্ষণ খাদ্যবস্তু থাকে ততক্ষণ বেদনা থাকে। আহারের এক ঘন্টা পরই বমন। ইহার রোগীর মিষ্টি দ্রব্যের প্রতি আগ্রহ বেশী।
আর্সেনিক এ্যালবাম ( ৩, ৬, ৩০)। পরিপাক যন্ত্রাদির পীড়ার সহিত যদি অত্যন্ত ছটফটানি, জ্বালা, বেদনা ও দুর্বলতা থাকে তাহা হইলে আর্সেনিক ফলপ্রদ হয়। পাকস্থলীর মধ্যে জ্বালাকর অনুভুতি ও বেদনা, কোন কিছু পান বা আহার করিলে উহাপর বৃদ্ধি। জলপান মাত্রই বা কিছুক্ষণ পরেই বমি। সামান্য কালবর্ণ বিকৃত রক্তসহ পিত্ত ও সবুজ শ্লেষ্মা বমন। ঠান্ডায় বৃদ্ধি ও উত্তাপে উপশম ইহার বিশেষত্ব।
হাইড্রাসটিস (Ø, ৩, ৬, ৩০)। কোষ্ঠবদ্ধ ধাতুগ্রস্ত লোকদের ও শিশুদের পাকস্থলীর ক্ষত ও ক্যান্সারে ইহা উপকারী। পাকস্থলী, অন্ত্র প্রভৃতির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে প্রথমে তরল এবং আঠার মত চটচটে এবং পরে হলদে বা সবুজ, ঘন, সময়ে সময়ে রক্তাক্ত চটচটে স্রাবও নির্গত হয়। জিহ্বা হরিদ্রাভ ও চটচটে। পেট ফোলা থাকে। কখনও কোষ্ঠবদ্ধতা কখনও উদরাময়।
কোন মন্তব্য নেই