একজিমা (Eczema) কি? ইহার কারণ, লক্ষণ ও নিরাময়ে হোমিওপ্যাথির ব্যবহার
একজিমা (Eczema) কি? ইহার কারণ, লক্ষণ ও নিরাময়ে হোমিওপ্যাথির ব্যবহার
একজিমা (Eczema) |
একজিমা (Eczema) রোগে ত্বকে প্রদাহ হয় এবং উক্ত স্থানে দলবদ্ধ ভাবে অনেকগুলি পুঁজপূর্ণ গুটি জন্মে যা ফাটিয়া সেখান থেকে আঠাল চটচটে রস নির্গত হয়। উপরে মামড়ি পড়ে এবং চুলকানি বর্তমান থাকে। আক্রান্ত স্থানের চারিদিকে লালবর্ণ কৈশিক শিরা সকল দ্বারা আবৃত ও হইতে প্রচুর মধুর মত আঠাল রসস্রাব নির্গত হয়। আক্রান্ত স্থানটি উত্তপ্ত হয়ে থাকে সাথে প্রচুর চুলকায়। রোগী আক্রান্ত স্থান চুলকিয়ে লাল করে ফেলে এবংদানাদার গুটিগুলো থেকে অনেক সময় রক্ত বাহির হয়ে আসে। অনেক সময় একজিমার গুটি গুলি বাহিরে প্রকাশ পায় না ফলে আক্রান্ত স্থানটি ফুলে থাকে। ইহা সাধারণত মাথার ত্বকে, কানের পার্শ্বে, মুখ, হাত, পা, শরীরের বিভিন্ন ভাজে, লিঙ্গ, অণ্ডকোষ, যোনি কপাট, উরুর ভিতর দিকে অর্থাৎ দেহের নানা স্থানে দেখা দেয়। Eczema রোগটি দেখা দিলে এমন ঔষধ বা চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎনয় যাতে করে রোগটি হঠাৎ করে বসে যায়। একজিমা হঠাৎ বসিয়া গিয়া উদরাময়, হাঁপানি, সর্দি , কোরিয়া ও স্ত্রীলোকদের প্রদরাদি এবং শিশুদের লিভারের সমস্যা হয়ে থাকে।
চর্মের উপর যদিও ইহা প্রকাশিত হয়, তবুও ইহাকে তরুণ পীড়া বলিয়া বিবেচনা করা যায় না। বহু ক্ষেত্রেই ইহার কারণ সোরা এবং বংশগত ধাতু দোষ। যক্ষা প্রবণ শিশু, পূর্ব পুরুষ থেকে প্রাপ্ত সিফিলিস দোষ প্রাপ্ত শিশুদের বেশীর ভাগই একজিমা রোগে আক্রান্ত হয় কিন্তু আশার দিক হলো একজিমা প্রকাশ পেলে শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি কঠিন কঠিন রোগ হইতে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, আর্সেনিক, পারদ, উত্তেজক পানীয় ও খাদ্য, কেমিক্যাল যুক্ত বস্তুর ব্যবহার, উদ্বেগ, পাট, সার, চুন, সোডা, লবণ, চিনি ইত্যাদি কারখানায় কাজ করা, দীর্ঘক্ষণ চামড়ার জুতা ও মোজা ব্যবহার একজিমা রোগ সৃষ্টিতে অনুপুরক হিসাবে কাজ করে থাকে।
একজিমা (Eczema) রোগের বহিঃপ্রকৃতির আকৃতি অনুসারে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ঃ-
ক) একজিমা সিমপ্লেক্স
খ) একজিমা ভেসিকিউলোসাম
গ) একজিমা রুব্রাম
ঘ) একজিমা ইম্পিটিজিনোডস
ঙ) একজিমা প্যাষ্টিউলোসাম
চ) একজিমা ফিসাম
ছ) একজিমা ক্রনিকম।
ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধাবলী
এলুমিনা-২০০ঃ শীতকালে পীড়ার বৃদ্ধি। বিছানার উত্তাপে উপসর্গের বৃদ্ধি ঘটে। ক্ষীণ দেহ, পিত্ত ধাতু, নম্র ও শান্ত স্বভাবের লোক ও সুপ্ত সিফিলিস দুষ্ট ব্যক্তি, দূর্বল, বৃদ্ধ ও চামড়া কুঞ্চিত ব্যক্তি। অসহ্য চুলকানী, চুলকাইতে চুলকাইতে রক্ত বাহির করিয়া ফেলে। ইহার রোগী কোষ্ঠবদ্ধতায় ভুগে। আক্রান্ত স্থানে বেদনা, কপালের পার্শ্বে বেদনা অধিক। একজিমা বেদনাযুক্ত হইয়া উঠিলে বা রোগিনী গর্ভবতী থাকিলে পোড়া মাটি, খড়ি মাটি ও কয়লা খাইয়া থাকে।
এনাকার্ডিয়াম-২০০ঃ হাতের আঙ্গুল, মুখ মন্ডল, অণ্ডকোষ, গলা, বুক, চক্ষু পল্লব প্রভৃতি স্থানে তরুণ একজিমা। চুলকানী। ফুস্কুডির ন্যায় ঘোর লালবর্ণ উদ্ভেদযুক্ত পীড়া। উদ্ভেদ সমূহ ডানদিক হইতে বামদিকে প্রসারিত হয়। রসক্ষরণ, উষ্ণ জল লাগাইলে বৃদ্ধি। রাত্রিকালে ও চুলকাইলে বৃদ্ধি হয়।
ক্যালকেরিয়া কার্ব-২০০, ১০০০ঃ শিশু থলথলে, মোটা, অস্থি সমূহ গঠিত হয় না। হাত পা ঠান্ডা, অতিশয় ধর্ম প্রবণ, ঘুমের মধ্যে মাথা ঘামে। মল অম্লগন্ধযুক্ত। এই সকল শিশুর মাথার চামড়ায় একজিমা। মস্তক হইতে মুখমন্ডল পর্যন্ত একজিমা বিস্তৃত হয়। ঘুম হইতে উঠিয়াই শিশু মাথা চুলকাইতে থাকে ও চুলকাইয়া রক্ত বাহির করে। নাভিতে, জানুতে ও কনুই এর মধ্যে, চামড়ার ভাজে রক্তস্রাবী একজিমা। স্কুফুলা ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তির পুরাতন আইসযুক্ত একজিমা। কোন স্থানে আঘাত লাগিলে ঐ স্থান হইতেই একজিমার সৃষ্টি হয়। পানি লাগাইলে বৃদ্ধি হয়।
ক্যালকেরিয়া ফস-২০০ঃ শীর্ণকায়, গণ্ডমালা দোষদুষ্ট শিশু ও রক্তহীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ইহা উপকারী। মেজাজ খিটখিটে ও দূর্বল হজমিশক্তি বিশিষ্ট শিশু। যক্ষাধাতু দোষ হইতে একজিমা, শুষ্ক মামড়িযুক্ত একজিমা। মলে দূর্গন্ধ, শিশুরা ঘর্মপ্রবণ।
আর্সেনিক-৩০, ২০০ঃ মুখমণ্ডল, মস্তক নিম্নপদদ্বয় এবং জননেন্দ্রিয় স্থানে শুষ্ক আঁইশযুক্ত ও প্রদাহযুক্ত একজিমা। সময়ে সময়ে ইহা হইতে পাতলা দূর্গন্ধযুক্ত রক্তস্রাব হয়। প্রবল জ্বালা ও চুলকানী। রাত্রিকালে ও ঠান্ডায় পীড়ার বৃদ্ধি এবং উত্তাপ প্রয়োগে উপশম। শিশু একজিমার সহিত অন্য কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভূগিয়া ক্রমশঃ শীর্ণ হইতে থাকে। কপালে ও চুলের ধারে ধারে আঁইসের ন্যায় মামড়ি যুক্ত উদ্ভেদ। পুরাতন একজিমা, চর্ম শুষ্ক, কর্কশ, কুশ্রী এবং কঠিন হইয়া যায়।
এন্টিম ক্রুড-৩০, ২০০ঃ হাত পায়ের তলায় শৃঙ্গাকার উঁচু আঁচিলের ন্যায় উদ্ভেদ থাকে। মুখে, কানে, নাকে, গণ্ডদেশে, দাড়িতে ও মাথার মধ্যে একজিমা, ফোষ্কার ন্যায় উদ্ভেদ, পুঁজ পূর্ণ থাকে। অতিশয় স্থুল ও কঠিন মধু বর্ণের মামড়িযুক্ত একজিমা, চারি পাশেই অতিশয় চুলকানী ও জ্বালা। পানিতে কাজ করার পর বা গোসলের পর পীড়ার বৃদ্ধি।
পেট্রোলিয়াম-৩০, ২০০ঃ শীতকালে পীড়ার প্রকাশ এবং গ্রীষ্মকালে সুপ্ত থাকে। একজিমা শুষ্ক আঁইশযুক্ত। আবার আর্দ্র, পুঁজস্রাবী হইয়া থাকে। মুখমণ্ডল, কানের পেছনে, অণ্ডকোষ, মস্তক, স্ত্রী জননেন্দ্রিয়, হাত-পা এবং পায়ের পাতায় একজিমা। হরিদ্রাভ সবুজ স্থুল মামড়ি। অতিশয় চুলকানি ও ব্যথা। চর্ম ফাটা ফাটা ও শুষ্ক দুর্গন্ধযুক্ত ঘর্ম, চুলকাইলে আগুনের ন্যায় জ্বালা করে। হাতের পিঠে একজিমা। পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে পীড়া, চর্ম ফাটা, চুলকাইলে উহা হইতে রক্ত পড়ে। পায়ের আঙ্গুল গুলির ফাঁকে ফাঁকে ফাটিয়া যায়। বর্ষাকালে ও গাড়ী চলিলে পীড়ার বৃদ্ধি।
সোরিনাম-২০০,১০০০ঃ অন্যান্য সুনির্বচিত ঔষধ এমনকি সালফার ব্যর্থহইলে ইহা উপযোগী। রোগী সোরা ধাতুগ্রস্ত, চুল এবং চর্ম চর্বি মাখানোর ন্যায় দেখায়। মল মূত্র ঘর্ম প্রভৃতি যাবতীয় স্রাবে অতিশয় দূর্গন্ধ। গ্রীষ্মকালে একজিমা অন্তর্হিত হয় এবং শীতকালে প্রকাশিত হয়। শুষ্ক শল্কাযুক্ত একজিমা। গায়ের চামড়া এত অপরিস্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত যে গোসল করিলেও দুর্গন্ধ যাইতে চায় না। একজিমায় অতিশয় চুলকানী এবং তাহা রাত্রিকালে শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। প্রবল চুলকানীতে রক্ত বাহির করিয়া ফেলে। শীতকাতর, দুর্বল, ভগ্নস্বাস্থ্য, সোরাদুষ্ট ও গণ্ডমালা ধাতুগ্রস্ত শিশুরাই এই পীড়ায় অধিক আক্রান্ত হয়। পুরাতন ক্ষতের দাগগুলি দেহের উপর স্পষ্ট হইয়া থাকে।
রাসটক্স-৩০,২০০ঃ ইহার রোগী অস্থির, সব সময় সঞ্চালনে উপশম পায়। ঋতু পরিবর্তনে বিশেষ করিয়া আর্দ্র ও শীত ঋতুতে বৃদ্ধি। এজমার গুটি গুলির চারিদেক রক্তবর্ণ মণ্ডল, অতিশয় জ্বালা, চুলকানী িএবং ঝিনঝিনি। মাথার একজিমাগুলি ফুষ্কুড়ির ন্যায়, আর্দ্র, পুরু ও রসপূর্ণ। মাথার একজিমা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, স্থুল মামড়ি পড়ে। চুলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অণ্ডকোষ ও উরুর ভিতর দিকে একজিমা হইতে প্রচুর রস ক্ষরিত হয়। গো-বীজ টিকা লওয়ার পর একজিমা প্রকাশিত হইলে ইহা বিশেষ উপযোগী। শিশুর মুখে দুর্গন্ধ। একজিমািআর্দ্র ও উপরে ভিজা মমড়ি পড়ে। অতিশয় চুলকানি ও জ্বালা, কিন্তু আক্রান্ত স্থানে গরম কিছু লাগাইলে ও গরম জ্বলে ডুবাইলে উপশম বোধ করে।
মেজেরিয়াম-৩০,২০০ঃ ইহার প্রধান লক্ষণ মোটা মমড়ি ও চটাপূর্ণ উদ্ভেদের ভিতর গাঢ় চটচটে পুঁজ সঞ্চয়। শরীরস্থ চর্বিশূণ্য অংশেই সাধারতনঃ মেজেরিয়ামের একজিমার উৎপাদনের লক্ষ্যস্থল। সেজন্য মাথার উপরেই ইহার চর্মপীড়ার আবির্ভাব সর্বাধিক লক্ষিত হয়। সমস্ত মস্তকটিতে প্রচণ্ড চুলকানী থাকে এবং ক্রমাগত চুলকাইবার ফলে গাঢ় রসপূর্ণ মোটা মোটা ফুষ্কুড়ির আবির্ভাব হয় এবং তাহা হইতে যে পুঁজস্রাব হয় তাহা জমাট বাঁধিয়া চুলগুলি জটা আকারে আটকাইয়া যায়। মামড়ি প্রথমে ঈষৎ লাল, পরে চা খড়ির ন্যায় সাদা দেখায়। একজিমা মাথা হইতে ভ্রু ঘাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অতিশয় চুলকানী এবং চুলকানির পর জ্বালা ও রক্তপড়া লক্ষণ থাকে। পুঁজ ভিষণ দুর্গন্ধ। মোটা চটাগুলির ভিতর অনেক সময় পোকাও জন্মিতে দেখা যায়। চুলকানীপূর্ণ স্থানটি চুলকাইবার পরেই অন্য স্থানে পুনরায় চুলকানীর আর্বিভাব। রোগী সর্বদাই শীত বোধ করে, কিন্তু চর্মপীড়ার যে কোনও প্রকার গরম সহ্য করিতে পারে না। সমগ্র নিমগ্র নিম্নপদের উপর উচ্চ শ্বেত বর্ণের মমড়ি, উত্তাপে চুলকানীর বৃদ্ধি হয়।
নেট্রাম মিউর-২০০, ১০০০ঃ রোগী দূর্বল, কৃশ, গ্রীবাদেশটি শুষ্ক। অতিশয় কোষ্ঠবদ্ধতা। কর্ণের পশ্চাতে, চুলের গোড়ায়, মলদ্বর, হাঁটু, হাতের কনুই, সন্ধির বাঁকে বাঁকে শুষ্ক একজিমা। নেট্রাম গরম কাতর, যাবতীয় চর্মপীড়া গ্রীষ্মকালেই বৃদ্ধি পায়। পরিস্কার জলপূর্ণ ফুষ্কুড়ি নির্গত হয়, ঐ ফুষ্কুড়িগুলি শুকাইয়া য়ায়, তাহার উপর শুষ্ক আইশের ন্যায় মামড়ি পড়ে। নেট্রামের একজিমায় সর্বদা রস ঝরে, মামড়ি পড়ে- তাহাতে চুল জড়াইয়া যায়। পানি লাগিলে ইহার চর্মপীড়ার বৃদ্ধি পায় ও চুলকানী বাড়ে। আঙ্গুলে চমড়া শুষ্ক ও ফাটা।
নেট্রাম সালফ-২০০, ১০০০ঃ রসপূর্ণ ফুষ্কুড়িযুক্ত একজিমা, সারা দেহে স্থানে স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলপূর্ণ ফুষ্কুড়ি জন্মে। প্রচুর পরিমাণে জলবৎ তরল রস নির্গত হয়। আঁচিলের ন্যায় দেখিতে লাল পিণ্ড সমূহ সমগ্র দেহে জম্মিয়া থাকে।
সিপিয়া-২০০, ১০০০ঃ একজিমার অতিশয় চুলকানী এবং চুলকানীর পর জ্বালা। সন্ধি স্থানের ঘাম হইয়া সেখানে প্রায় ভিজা থাকে, সেই সকল স্থানে জ্বালা কিম্বা টাটানি ব্যথা হইলে ইহা উপকারী। মুখে বুকে ও পেটে বাদাী রঙ্গের গাগ পড়িলে বা ছোট উদ্ভেদ হইলে কিম্বা একজিমা বা হার্পিস নামক চর্মপীড়া হইলে অথবা ছোট ছোট পুঁজভরা ষ্ফোটক বা বড় গোছের ফুস্কুড়ি উপর্যুপরি হইতে থাকিলে সিপিয়ায় আরোগ্য হয়। মামড়িযুক্ত উদ্ভেদ। অন্তসত্বাবস্থায় একজিমা, প্রথমে শুষ্ক থাকে, শীঘ্রই দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজের ন্যায় প্রচুর আস্রাব হয় এবং তাহা শুকাইয়া মামড়ি পড়ে ও পরে ফাটিয়া ঝরিয়া যায়। দেহের নানা স্থানে, মুখ মন্ডল, মস্তকে, বাহুতে, কুঁচকী, পদ, জননাঙ্গ, মলদ্বার প্রভৃতি স্থানে চুলকানিযুক্ত একজিমা। সন্ধি সমূহের বাঁকে বাঁকে আঁইশযুক্ত বাদামী বর্ণ চক্রাকার একজিমা।
সাইলিসিয়া-২০০, ১০০০ঃ মস্তক ও পদদ্বয়ে দুর্গন্ধ ঘর্ম। রোগী খুব বেশী উত্তপ আকাংখা করে। মাথার পেছন দিকে, হাতে, অণ্ডকোষে ও কানের পেছন দিকে একজিমা। কখনও আর্দ্র আবার কখনও শুষ্ক, আঁইশযুক্ত। চুলকানী ও জ্বালা, অনেক সময় উহা হইতে পুঁজ বাহির হয়। সন্ধাবেলা ও দিনে বেশ চুলকায়, রাত্রিকালে চুলকানী তেমন থাকে না। অমাবশ্যা ও পুর্ণিমায় উপসর্গের বৃদ্ধি। আচ্ছাদিত রাখিলে উপশম।
সালফার-২০০, ১০০০ঃ ইহার রোগীর গাত্রচর্ম কর্কশ এবং সব সময়ই নানা জাতীয় উদ্ভেদ জন্মে। রোগী নোংরা প্রকৃতির শরীর হইতে দুর্গন্ধ বাহির হয়। ইহার চর্মপীড়ায় সারা দেহে অসহ্য চুলকানী, চুলকাইলে বেদনা ও জ্বালা বৃদ্ধি পায়, মাথার পশ্চাৎ দিকে, ঘাড়ের উপর ও কানের পার্শ্বে একজিমা। সারাদেহে পুঁজবটি। একজিমা হইতে সহজেই রক্ত ও ঘন পুঁজ স্রাব হয়। চিবুকের চারি পাশে এবং পায়ের আঙ্গুলে হরিদ্রা বর্ণের মামড়ি পড়ে, চুলকায় ও জ্বালা করে। গোসল করিলে ও বিছানার গরমে পীড়ার বৃদ্ধি হয়।
গ্রাফাইটিস-২০০, ১০০০ঃ কোষ্ঠ বদ্ধের থাতু, মুখ ও চক্ষুর কোন ফাঁটিয়া যায়। একজিমার ইহা উত্তম ঔষধ। মোটা সোটা ব্যক্তি, স্বল্প রজঃস্রাব প্রবণ, শুষ্ক ও ঘর্ম বিহীন চর্ম এইরূপ ব্যক্তির একজিমা। কানের পিছনে, গ্রীবা, গণ্ডদেশ, মস্তক, পৃষ্ঠ, হাতের তালু, পদদ্বয়, দেহের ভাঁজে ভাঁজে একজিমা। ইহা ধুইলে ক্ষতের ন্যায় দেখায়। প্রচুর পরিমাণে আঠালো বা মধুর ন্যায় রস বাহির হয়। অতিশয় চুলকানী ও জ্বালা। দূর্গন্ধ হয়। আক্রান্ত স্থানের চর্ম মোট হয় ও ফাটিয়া যায়। মাথার একজিমা, উহাতে মামড় পড়ে ও চুলে জটা বাঁধে। হাত পায়ের নখগুলি বিশ্রী ও পুরু। ক্ষতস্থান স্পর্শে তেমন বেদনা বোধ করে না।
মার্কসল-৩০, ২০০ঃ মুৃখে প্রচুর লালা জন্মে। রোগী অতিশয় ঘর্ম প্রবণ, মুখ হইতে দুর্গন্ধ বাহির হয়। মস্তকের একজিমা। বুকে, পায়ে ও নিম্ন পায়ে একজিমা। পুঁজবটি জন্মানোর পর একজিমার প্রকাশ। দুর্গন্ধ পুঁজ নিঃসরণ, শুষ্ক ও আঁইশযুক্ত একজিমা। ক্ষত হইতে ঘন ঘন হরিদ্রাবর্ণের মামড়ি ঝরে এবং তাহার চারি পাশে প্রদাহ সংঘটিত হয়। শয্যার উত্তাপে ও রাত্রিকালে চুলকানীর বৃদ্ধি। চুলকাইলে বেদনা হয় ও রক্ত বাহির হয়। সিফিলিস ধাতুর রোগীতে ইহা বিশেষ উপযোগী।
হিপার সালফ-৩০, ২০০ঃ রোগী খুবই শীকাতর। ঠাণ্ডা হাওয়া অসহ্য। পারদ ব্যবহারের কুফল। কোন উগ্র মলম ব্যবহারের পর উপযোগী। মাথায়, জননেন্দ্রিয়, চর্মের ভাঁজে, অণ্ডকোষ ও উরুদেশে, কানের পেছনে একজিমা। অতিশয় চুলকানী ও দুর্গন্ধ রস ক্ষরণ। সামান্য আঁচড় লাগিয়া রোগীর চর্ম পাকিয়া উঠে। পুরাতন স্থানের উপর নতুন উদ্ভেদ উৎপন্ন হয় ও একজিমা বাড়িয়া যায়। প্রধান আক্রান্ত স্থানের চতুর্দিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটি জন্মে। আক্রন্ত স্থানটি অতিশয় স্পর্শ কাতর।
ডালকামারা-৩০, ২০০ঃ গণ্ডমালা দোষপ্রবণ শিশু। শীতে ও বর্ষাকালে পীড়ার বৃদ্ধি। লালবর্ণ ও প্রদাহিত তলদেশের উপর ফুষ্কুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ। স্ত্রীলোকরা ঋতুবর্তী হওয়ায় অনতিপূর্বে মুখমন্ডল বা তাতে পায়ে বিশেষ স্থানে একজিমা। একজিমা হইলে জলবৎ স্রাব হয়, চুলকাইলে রক্ত পড়ে। গণ্ডমালা ধাতু শিশুদের গ্লাণ্ড বৃদ্ধিসহ একজিমা। ঠান্ডা পানি ব্যবহারে পীড়ার বৃদ্ধি। একজিমা লুপ্ত হইলে হাঁপানী দেখা দেয়।
ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া-৩০, ২০০ঃ ইহাতে মাথা, মুখ, হাতে ও পায়ে এক প্রকার শুষ্ক একজিমা, তাহা ক্রমশঃ বাড়ে। রসপূর্ণ একজিমায় ঐ রস যেখানে লাগে সেখানে নতুন উদ্ভেদ সৃষ্টি হয়। পঁচা দুর্গন্ধ নির্গত হয়, উদ্ভেদের উপর পুরু মামড়ি পড়ে, পোকা জন্মে ও ভয়ানক চুলকায়। পশ্চাৎ মস্তকে ও তাহার পাশে একজিমা। শিশুদের পীড়া। একস্থানে চুলকাইলে তথা হইতে নিবৃত্ত হইয়া অন্য স্থানে চুলকায়। মাথার চুল পড়ে। ইহার ধাতুযুক্ত রোগীর একজিমা চাপা দিলে মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা দেয়।
উল্লেখিত ঔষধগুলি ছাড়াও-লক্ষণ অনুযায়ী লাইকোপোডিয়াম, ল্যাকেসিস, জুগন্যান্স সিনেরিয়া, ব্যারাইটা কার্ব, কষ্টিকাম, ভায়োলা ট্রাইকলার, ভিনকা মাইনর, থুজা, সার্সাপ্যারিলা, ওলিয়েণ্ডার, সাইকিউটা ভিরোসা, ক্রোটন টিগ, কোনিয়াম, এমন মিউর, এগারিকাস, সিফিলিনাম, এক্স-রে, বোভিষ্টা, ম্যাঙ্গানাম, ক্লিমেটিস, কেলি মিউর, এসিড নাইট্রিক, বোরাক্স, অরাম মেট, এন্টিম টার্ট , এপিস মেল, কেলি আর্স, ক্যান্থারিস, টিউবারকুলিনাম ঔষধগুলি একজিমা রোগে উপকার করে থাকে।
[বিঃদ্রঃ যে কোন রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক একটি মাত্র ঔষধ ব্যবহার করা উচিত একাধিক ঔষধ একসাথে ব্যবহার না করাই উত্তম; ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই রিমেডি রিলেশন দেখে নিতে হবে]
কোন মন্তব্য নেই