ল্যাকেসিস ( Lachesis) [ সুরুকুকু নামক সাপের বিষ ] [ Lach - ল্যাকে ]
ল্যাকেসিস ( Lachesis) |
ল্যাকেসিস ( Lachesis) [ সুরুকুকু নামক সাপের বিষ ]
রোগী বিমর্ষপ্রকৃতি, কালো চোখ, উৎসাহশূণ্যতা ও আলস্যযুক্ত।
দেহে তিল, আঁচিলযুক্ত, লালবর্ণ চুল একং পিত্তপ্রধানধাতু স্ত্রীলোক ( ফস)।
মাংসল লোক অপেক্ষা পাতলা, শীর্ণকায় লোকদিগের পক্ষে সমধিক উপযোগী; যাহারা রোগের জন্য দৈহিক ও মানসিক উভয়ভাবে পরিবর্তিত হইয়া পড়িয়াছে।
রজোনিবৃত্তিকালীন রোগসমূহ; অর্শ, রক্তস্রাব, দেহের মধ্যে উত্তাপের উচ্ছাস ও উত্তপ্তঘর্ম, মস্তকশীর্ষে জ্বালা, শিরঃপীড়া, বিশেষতঃ রজোনিবৃত্তিকালে বা তাহার পরে ( স্যাঙ্গুই, সালফ)।
যে-সকল স্ত্রীলোক রজোনিবৃত্তিকাল হইতে আর আরোগ্যলাভ করে নাই,“সেই সময় হইতে আর কখনও ভাল বোধ করে না।”
বামপার্শ্ব প্রধানতঃ আক্রান্ত হয়। রোগসমূহ বামপার্শ্বে আরম্ভ হইয়া দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়; বাম ডিম্বকোষ, বাম অণ্ডকোষ, বাম বক্ষের পীড়া।
অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা; গলদেশে, পাকস্থলীতে, উদরে; গলদেশ বা উদরে বিছানার চাদর বা রাত্রিকালীন পোষাকের স্পর্শও সহ্য হয় না; এপিস অথবা বেলেডোনার যেরূপ বেদনা ও অত্যনুভূতি থাকে, ইহাতে সেরূপ থাকে না, কিন্তু বস্ত্রের স্পর্শ তাহাকে অস্বচ্ছন্দ করিয়া তুলে, স্নায়বিক করিয়া তুলে।
গলদেশে বা কোমরে কোন আঁটা বন্ধনী সহ্য করিতে পারে না।
অতিরিক্ত গরমে বা অতিরিক্ত শৈত্যে দূর্বল হইয়া পড়ে।
মাতালদিগের রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া এবং অর্শ, ইরিসিপ্লাস ও সন্নাসরোগ হইবার প্রবণতা।
শিরঃপীড়া, শঙ্খস্থানে চাপনবৎ বা ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা; সঞ্চালনে, পাপে, অবনত হইলে, শয়ন করিলে, নিদ্রার পরে বৃদ্ধি;
রোগিনীর নিদ্রা যাইতে ভয় হয় কারণ তাহাকে শিরঃপীড়া লইয়াই জাগিয়া উঠিতে হইবে।
মস্তকে রক্তের উচ্ছাস, মদ্যপানের পর, মানসিক উত্তেজনার পর; অবরুদ্ধ বা অনিয়মিত ঋতুস্রাবহেতু, রোজনিবৃত্তিকালে, বাম পার্শ্বের সন্ন্যাসরোগ।
মস্তকশীর্ষে চাপ ও ভারবোধ ( সিপিয়া); মস্তকের পশ্চাৎদিকে সীসার ন্যায় ভারবোধ।
সর্বপ্রকার লক্ষণ, বিশেষতঃ মানসিক লক্ষণ, নিদ্রার পর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, অথবা বর্ধিত যন্ত্রণা লইয়াই সে নিদ্রা হইতে জাগে, বৃদ্ধির মধ্যেই সে নিদ্রা যায়, অসুখী, যাতনাগ্রস্ত, উদ্বিগ্ন, বিষন্ন, প্রাতঃকালে গাগিয়া উঠিলে ঐ সমস্যগুলির বৃদ্ধি।
মানসিক উত্তেজনা প্রবণতা, ভাবাধিক্য, তৎসহ ভবিয্যৎ বক্তার ন্যায় দিব্যদৃষ্টি; সুস্পষ্ট কল্পনাশক্তি, অত্যন্ত বাচালতা ( এগারি, ষ্ট্যামো); সবসময়েই কথা বলিতে চায়, দ্রুত বিষয় বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে চলিয়া যায়, একটি কথা বলিয়াই আর একটি প্রসঙ্গের উত্থাপন করে।
কোষ্ঠবদ্ধতা, সরলান্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা, সরলান্ত্রে বেগ না হইয়া মল অবরুদ্ধ থাকে; মলদ্বার অবরোধক পেশীর সঙ্কোচন অনুভব করে ( কষ্টি, নাই এসি)।
নিয়মিত সময়ে ঋতুস্রাব দেখা দেয়; উহা অতিশয় অল্পকালস্থায়ী, অত্যল্প, ক্ষণপ্রবাহযুক্ত; ঋতুপ্রবাহ দেখা দিলেই, সকল কষ্টের উপশম হয়, ঋতুকালে সমসময়েই অপেক্ষাকৃত ভাল থাকে (জিঙ্ক)।
অর্শ, তৎসহ স্বল্প ঋতুস্রাব; রজোনিবৃত্তিকালীন অর্শ, অবরুদ্ধ অর্শ, উহাতে উপরদিকে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা তীরবৎ ধাবিত হয় ( নাই এসি)।
মুখ অথবা নাকের নিকট সামান্য কিছু আসিলেই শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা জন্মে; পাখার বাতাস চায়, কিন্তু উহা দূর হইতে এবং ধীরে ধীরে করিতে হইবে ( দ্রুত পাখার বাতাস চায়-কার্ব ভেজ)।
যেই সে নিদ্রিত হইয়া পড়ে, অমনি শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয় ( এমন কার্ব, গ্রিন্ডেলিয়া, ল্যাক ক্যানি, ওপি)।
অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা; সর্বাঙ্গে কম্পন, দূর্বলতা হেতু সর্বদাই অবসন্ন হইয়া পড়ে, প্রাতঃকালে বৃদ্ধি ( সালফ, টিউবার)।
মৃগীরোগ, নিদ্রার মধ্যে দেখা দেয় (বিউফো); জৈব তরল পদার্থের অপচয় হেতু, হস্তমৈথুন হেতু, ঈর্ষা হেতু।
রক্তস্রাবপ্রবণ ধাতু; ক্ষুদ্র ক্ষত হইতে সহজেই প্রচুর রক্তস্রাব হয় ( ক্রোটেল, ক্রিয়ো, ফস); রক্ত কালো এবং জমাট বাঁধে না ( ক্রোটেল, সিকেলি);
ফোঁড়া, কার্বাঙ্কল, ক্ষত, উহাতে দারুণ বেদনা ( ট্যারান্টু) সাংঘাতিক প্রকারের পুঁজবটী শয্যাক্ষত; কালচে নীলাভ বেগুনিবর্ণ; সাংঘাতিক হইবার প্রবণতা।
বিষাক্ত ক্ষতের , শবব্যবচ্ছেদের কুফল ( পাইরো)। মূত্রাশয়ের মধ্যে যেন একটি বল গড়াইতেছে এরূপ অনুভূতি।
জ্বর প্রতি বৎসর ফিরিয়া আসে; পূর্ববর্তী শরৎকালে কুইনাইন দ্বারা চাপাপড়া জ্বর প্রতি বসন্তকালে পূনরাবির্ভূত হয় ( কার্ব ভেজ, সালফ)।
জ্বর টাইফয়েড, টাইফাস; আচ্ছন্ন নিদ্রা অথবা বিড়বিড় করিয়া প্রলাপ বকে; মুখমন্ডল বসিয়া যায়, নিম্ন চোয়াল ঝুলিয়া পড়ে, জিহ্বা, শুষ্ক, কালবর্ণ, কম্পশীল, অতিকষ্টে জিহ্বা বাহির করে এবং উহা বাহির করার সময় দাঁতে আটকাইয়া যায়, চোখের শুক্রমন্ডল হরিদ্রা বা কমলা বর্ণ, ঘর্ম ঠান্ডা, উহাতে হরিদ্রাবর্ণ, রক্তবর্ণ দাগ পড়ে ( লাইকো)।
ডিপথেরিয়া এবং টনসিল প্রদাহ, উহা বাম দিকে আরম্ভ হইয়া দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয় ( ল্যাক ক্যানি, স্যাবাডি), কালচে বেগুনেবর্ণ আকৃতি ( ন্যাজা); গরম পানীয়ে ও নিদ্রার পর বৃদ্ধি; গিলিবার সময় শক্ত অথবা তরল দ্রব্য অধিক কষ্টকর হয় ( বেল, ব্রায়ো, ইগ্নে); গলার আকৃতি দেখিয়া যেরূপ মনে হয়, তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী অবসন্নতা।
বিরুদ্ধগুণযুক্ত- এসেট এসি, কার্বলিক এসিড।
সবিরাম জ্বরের প্রকৃতি পরিবর্তিত হইলে ল্যাকেসিসের পর নেট্রাম মিউরের প্রয়োজন হয়।
উপচয়-নিদ্রার পর, স্পর্শে , শীতোষ্ণতার আধিক্যে, অম্লদ্রব্যে, মদ্যে, সিঙ্কোনায়, পারদে, চাপে অথবা আকুঞ্চনে, সূর্যের কিরণে, বসন্তকালে, গ্রীষ্মকালে।
[শক্তি-৩০, ২০০]
কোন মন্তব্য নেই