সোরিনাম (Psorinum) [সোরিন - Psor]
[সোরা বিষজাত নোসড]
সোরাদোষদুষ্টধাতু ব্যক্তির পক্ষে সমধিক উপযোগী।
পুরাতন রোগ যখন উত্তমরূপে নির্বাচিত ঔষধে উপশম হয না অথবা স্থায়ী ফল দেখা যায় না (তরুণ রোগে, সালফার) তখন উপযোগী; যখন সালফার উপযোগী বলিয়া বিবেচিত হইয়াও উপশম করে না তখন উপযোগী।
কঠিন তরুণ রোগের পরে প্রতিক্রিয়ার অভাব। ক্ষুধা ফিরিয়া আসে না।
শিশু বিবর্ণ, শীর্ণ, রুগ্ন। রুগ্ন শিশু দিবা বা রাাত্রিকালে ঘুমায় না কিন্তু বিরক্ত করে, খিট্খিট করে, কাঁদে; অথবা শিশু বেশ ভাল, সারাদিন খেলা করে কিন্তু রাত্রে অস্থির, বিরক্তিকর ও ক্রন্দনশীল হইয়া উঠে (লাইকোর বিপরীত)।
অত্যন্ত দূর্বলতা ও নিস্তেজভাব; জৈব তরল পদার্থের অপচয় হেতু; তরুণ রোগের পরবর্তী দূর্বলতা হেতু, উহার সহিত কোন যান্ত্রিক রোগ বা প্রত্যক্ষ কারণ থাকিতে পারে, না থাকিতেও পারে।
দেহ হইতে দূর্গন্ধ ছাড়ে; এমন কি স্নানের পরেও।
সমস্ত শরীরে বেদনা, সহজেই মচকাইয়া যায় অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
ঠান্ডা বাতাসে অথবা আবহাওয়ার পরিবর্তনে অত্যনূভূতি, অতি গরম আবহাওয়াতেও লোমের টুপি, ওভারকোট অথবা শাল পরিধান করে।
ঝড়ের আবহাওয়ায় সে অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত থাকে; ঝড়চক্রের সময় বা তাহার কয়েকদিন পূর্ব হইতে অস্থির হইয়া পড়ে (ফস); চর্মের উপর শুষ্ক শল্কাযুক্ত উদ্ভেদসকল, গ্রীষ্মকালে বিলুপ্ত হয়, শীতকালে ফিরিয়া আসে।
চুলকানি অথবা অন্যপ্রকার চর্মরোগ চাপাপড়া পীড়ায় সালফার বিফলে ব্যবহার্য; পীড়াটি কঠিন এবং সামান্য মানসিক উত্তেজনায় প্রকাশ পায়।
রোগাক্রমনের পূর্বদিন অস্বাভাকিকরূপে ভাল বোধ করে।
অতিমাত্রায় সোরাদোষদুষ্ট রোগী, স্নায়বিক , অস্থির, সহজেই চমকিয়া উঠে।
সর্বপ্রকার স্রাব-উদরাময়, প্রদরস্রাব, ঘর্ম প্রভৃতিতে পচা মাংসের ন্যায় দূর্গন্ধ ছাড়ে।
উৎকন্ঠিত, ভয়পূর্ণ, ভাবী অমঙ্গল আশঙ্কা করে।
ধর্মবিষয়ক বিমর্ষতা, অত্যন্ত নিরুৎসাহ; দুঃখিত, আত্মহত্যার চিন্তা করে, নিজের মুক্তি সম্বন্ধে (মেলিলো) এবং আরোগ্য সম্বন্ধে হতাশ হইয়া পড়ে।
হতাশ- তাহার ভয় হয় যে সে মরিবে, সে ব্যবসায়ে বিফল হইবে; রোগরে চরম বৃদ্ধির সময় নিজের ও যাহার চারিপাশে থাকে তাহাদের জীবন অসহ্য করিয়া তোলে।
অত্যন্ত চুলকানিতে পাগলের ন্যায় হইয়া পড়ে।
শিরঃপীড়া; শিরঃপীড়ার পূর্বে চক্ষের সম্মুখে আলোকের দপদপানি দেখে; দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয় অথবা একেবা্রেই দেখিতে পায় না ( ল্যাক ডি, কেলি বাই) চক্ষুর সম্মুখে কাল কাল বিন্দু বা অঙ্গুরীয়বৎ দেখে।
শিরঃপীড়া, ঐ সময় সর্বদাই ক্ষুধার্ত বোধ করে, আহারে সময় উপশম বোধ হয় (এনাকার্ডি, কেলি ফস; উদ্ভেদ চাপা পড়িয়া অথবা ঋতু অবরুদ্ধ হইয়া শিরঃপীড়া; নাসাপথে রক্তস্রাবে উপশম(মেলিলো)।
চুল শুষ্ক, উজ্জলতাহীন, সহজেই জট বাঁধে, জড়াইয়া যায় ( লাইকো), উকুনাদি জনিত কেশরোগ (ব্যারা কার্ব, সার্সা, টিউবার)।
মস্তকত্বক শুষ্ক, আইসযুক্ত অথবা আর্দ্র, দুর্গন্ধযুক্ত, পুঁজপূর্ণ উদ্ভেদযুক্ত, উহা হইতে চটচটে দুর্গন্ধ স্রাব নির্গত হয় (গ্র্যাফাই, মেজের)।
অত্যন্ত আলোকাতঙ্ক, তৎসহ চক্ষুপত্রের প্রদাহ, চক্ষু মেলিতে পারে না, বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজিয়া পড়িয়া থাকে।
কর্ণ : কর্ণের উপর ও কর্ণের পশ্চাতে আর্দ্র মামড়ি েএবং ক্ষততা, উহা হইতে রসানি ক্ষরণ হয়, রাসানি দুর্গন্ধ ও চটচটে (গ্র্যাফাই)।
কানপাকা, কান হইতে পাতলা, কলতানির মত অতি দূর্গন্ধ স্রাব বাহির হয়, উহার গন্ধ পচা মাংসের মত, পুরাতন পীড়া; হাম অথবা আরক্ত জ্বরের পরবর্তী।
বয়ঃব্রণ, সর্বপ্রকার; সাধারণ ্এবং গোলাপীবর্ণের, ঋতুকালে বৃদ্ধি; কফি, চর্বি, চিনি ও মাংস আহারে বৃদ্ধি, যখন সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যর্থ হয় অথবা সামান্যমাত্র উপশম করে।
গলক্ষত, টনসিলদব্য় অত্যন্ত স্ফীত, গিলিতে কষ্ট ও বেদনা, জ্বালা করে, পুড়িয়া যাওয়ার ন্যায় বোধ হয়, গিলিতে গেলে তীব্র ছিন্নকর বেদনা কর্ণ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (বেদনাশূণ্য- ব্যারা কার্ব);
প্রচুর দূর্গন্ধ লালাস্রাব, গলার মধ্যে আঠার ন্যায় শ্লেষ্মাসঞ্চয়, সর্বদা গলা খেকরি দিতে হয়; এই ঔষধ কেবলমাত্র তরুণ আক্রমণের উপশম করে না, প্রবণতাটিকেও নির্মূল করে।
খকখক করিয়া কাশিয়া মটরের আকার পনিরের মত গয়ের নির্গত করে; উহার স্বাদ বিরক্তকর, গন্ধ পচা মাংসের ন্যায় (কেলি মিউর)।
মল জলবৎ গাঢ় বাদামীবর্ণ, দুর্গন্ধ, পচা মাংসের গন্ধ, অসাড়ে মল নির্গমন, রাত্রি ১টা হইতে ৪টায় বৃদ্ধি, কঠিন তরুণ পীড়ার পরবর্তী, দন্তোদ্গমকালে, শিশুদিগের, আবহাওয়ার পরিবর্তনকালে।
কোষ্ঠবদ্ধতা, দুর্গম্য, তৎসহ পৃষ্ঠবেদনা, সরলান্ত্রের নিষ্ক্রিয়তাহেতু, যখন সালফার প্রয়োগে উপকার হয় না।
শয্যামূত্রঃ মূত্রাশয়ের আংশিক পক্ষাঘাতহেতু, পূর্ণিমার সময়; বংশগত একজিমার ইতিহাসযুক্ত দুর্দম্য রোগ।
বহু বৎসর স্থায়ী পুরাতন গনোরিয়া উহা চাপা দেওয়া যায় না আবার আরগ্য করাও সম্ভব হয় না; এবং সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যর্থ হয়।
প্রদরস্রাব, অসহ্য দুর্গন্ধযুক্ত বড় বড় চাপ নির্গত হয়, ত্রিকাস্থি প্রদেশে তীব্র বেদনা, দূর্বলতা, ঋতুনিবৃত্তিকালীন বয়সে।
গর্ভাবস্থায় অতি দুর্দম্য বমন, গর্ভস্থ সন্তান বেগে নড়াচড়া করে যখন সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যর্থ হয়; এই ঔষধে গর্ভস্থ শিশুর সোরাদোষ সংশোধিত হয়।
তরুণ রোগের পর প্রচুর ঘর্ম, উহাতে সকল যন্ত্রণার উপশম হয় (ক্যালাডি, নেট্রাম মিউর)।
হাঁপানি, স্বাসকৃচ্ছ, খোলা বাতাসে বৃদ্ধি, উঠিয়া বসিলে বৃদ্ধি (লরো), শুইলে এবং বাহুদ্বয় যথেষ্ট ফাঁক করিয়া প্রসারিত রাখিলে উপশম (আর্সের বিপরীত), রোগী হতাশ, মনে করে তাহার মৃত্যু হইবে।
প্রতি শীতকালে কাশি ফিরিয়া আসে।
ওষধিগন্ধ জ্বর; নিয়মিতভাবে প্রতি বৎসর নির্দষ্ট মাসের একই দিন উপস্থিত হয়, তৎসহ হাঁপানি, সোরাদোষের অথবা একজিমার ইতিহাস বর্তমান থাকে। গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ প্রতিরোধ করিবার জন্য ও সোরাদোষ নির্মূল করিবার জন্য পূর্ববর্তী শীতকালে রোগীর চিকিৎসা করিতে হইবে।
কাশি, চুলকানি বা একজিমা চাপা পড়ার পরবর্তী; পুরাতন কাশি, বহুবৎসর স্থায়ী কাশি, প্রাতঃকালে জাগয়িা উঠিলে এবং সন্ধ্যাকালে শুইলে বৃদ্ধি (ফস, টিউবার); গয়ের সবুজ, হালদে অথবা লবণাক্ত; পুঁজের ন্যায়; শ্লেষ্মা উঠার পূর্বে বহুক্ষণ কাশিতে হয়।
চর্ম; চর্মরোগ জন্মানর অস্বাভাবিক প্রবণতা (সালফ), উদ্ভেদগুলি সহজেই পাকিয়া উঠে (হিপার); শুষ্ক, নিষ্ক্রিয় চর্মরোগ, রোগীর কদাচিৎ ঘাম হয়, তাহাতে মলিন দেখায়, মনে হয় যেন সে কখনও স্নান করে নাই; গায়ের ত্বক কর্কশ, তৈলাক্ত, যেন সারা গায়ে তেল মেখে আছে। সালফার ও জিঙ্ক দিয়ে তৈরী মলমদ্বারা চর্মরোগ চাপা পড়ার কুফল।
অসহ্য চোর ডাকাত, বিপদ ইত্যাদির স্বপ্ন দেখে বলিয়া নিদ্রাশূণ্যতা (নেট্রাম মিউর)।
সোরা বা সোরা ধাতু দূর করিবার জন্য সোরিনাম প্রয়োগ করা উচিৎ নয়, অন্যান্য ঔষধের মত লক্ষণ সমষ্টির উপর দৃষ্টি রাখিয়া রোগীর ব্যক্তিগত চরিত্রের সহিত সম্পূর্ণ মিলিলে প্রয়োগ করিতে হয়, এবং সেই ক্ষেত্রে এই ঔষধের আশ্চর্যজনক ক্রিয়া উপলব্ধি করা যায়। -ডাঃ এইচ, সি, এলেন
সম্বন্ধ-অনুপূরক-সালফার ও টিউবারকুলিনাম। ইহার পরে এলু, বোরাক্স, হিপার, সালফ, টিউবার ভাল ফল দেয়। গর্ভকালীন বমিতে ল্যাকটিক এসিডের পরে ব্যবহার্য। ডিম্বকোষের আঘাত লাগিয়া রোগে আর্নিকার পরে উপযোগী।
সোরিনাম সম্পর্কে জে বি বেল বলেন,-“ বিশুদ্ধ স্বর্ণ অথবা বিশুদ্ধ ময়লা যাহা হইতে উৎপন্ন হউক না কেন, আমরা ইহার মূল্যবান শক্তির জন্য কৃতজ্ঞ থাকিব, এবং ঐ কৃতজ্ঞতাবোধের জন্য উৎপত্তি সম্বন্ধে গ্রহ্য বা অনুসন্ধন করিব না।”
[শক্তি - ৩০, ২০০, ১০০০]
অনেকসুন্দর
উত্তরমুছুন